ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পটভূমি ও প্রতিষ্ঠাঃ
১৯৭১ সালের পূর্বে ঔষধ প্রশাসন ছিল পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত একটি দপ্তর। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দপ্তরটি স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রণালয়ের একটি সংযুক্ত বিভাগ হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করতো। ১৯৭৬ সালে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ঔষধ প্রশাসন একটি আলাদা পরিদপ্তর হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। সর্বশেষ ২০১০ সালে ঔষধ প্রশাসন পরিদপ্তরকে অধিদপ্তরে উন্নীত করা হয়।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অধীন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর দেশের ঔষধ সেক্টরের লাইসেন্সিং ও নিয়ন্ত্রণকারী একমাত্র প্রতিষ্ঠান। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর বিদ্যমান ঔষধ আইন, ঔষধ নীতি ও সরকারের দিক-নির্দেশনা প্রয়োগ ও অনুসরণপূর্বক ঔষধ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত সকল কর্মকান্ড পরিচালনা করে থাকে।
মহাপরিচালক, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের প্রধান এবং লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ (ড্রাগস্) হিসেবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় ঔষধ ভবন, মহাখালী, ঢাকায় অবস্থিত এবং জেলা ও বিভাগ পর্যায়ে এর অধীন ৬৪ টি জেলা ও ৮ টি বিভাগীয় কার্যালয় রয়েছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের আওতাভুক্ত ন্যাশনাল ড্রাগ কন্ট্রোল ল্যাবরেটরী, মহাখালী, ঢাকা এবং সেন্ট্রাল ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরী, চট্টগ্রাম নামীয় দুইটি ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরী রয়েছে। এছাড়াও বিভাগীয় বরিশাল ও রাজশাহী বিভাগে দুইটি ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরী রয়েছে।
ভূমিকাঃ
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন দেশের ঔষধ একমাত্র নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য মানসম্পন্ন, নিরাপদ ও কার্যকর ঔষধ উৎপাদন, আমদানি, রপ্তানি, বিক্রয়, বিতরণ এবং ঔষধের যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিত করা। ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ তারিখে ঔষধ ও কসমেটিকস্ এর উৎপাদন, আমদানি, রপ্তানি, বিক্রয়, মজুত, সংরক্ষণ, প্রদর্শন, বিতরণ ও মান-নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে The Drugs Act-1940 এবং The Drugs (Control) Ordinance-1982 কে একীভূত করে আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুসরণপূর্বক যুগোপযোগী ‘ঔষধ ও কসমেটিকস্ আইন, ২০২৩’ মহান জাতীয় সংসদে পাশ হয়।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমসমূহ যথা-ঔষধ উৎপাদন কারখানার নতুন প্রকল্প মূল্যায়ন ও অনুমোদন, ঔষধ প্রস্তুতের জন্য লাইসেন্স প্রদান ও নবায়ন, খুচরা ও পাইকারী ঔষধ বিক্রয় লাইসেন্স প্রদান ও নবায়ন, ঔষধের রেজিস্ট্রেশন প্রদান ও নবায়ন, ঔষধের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য সনদ প্রদান, ঔষধের কাঁচামাল ও মোড়ক সামগ্রী আমদানির জন্য ব্লকলিস্ট অনুমোদন, ঔষধ আমদানির ক্ষেত্রে ইন্ডেণ্ট অনুমোদন, আমদানিকৃত তৈরী ঔষধ ও ঔষধের কাঁচামালের ছাড়পত্র প্রদান, ঔষধ রপ্তানির জন্য লাইসেন্স, Certificate of Pharmaceutical Product (CPP), Free Sale Certificate (FSC) ও Good Manufacturing Practice (GMP) সার্টিফিকেট প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, বাৎসরিক বাজেট, বিগত বৎসরে সম্পাদিত কার্যক্রমের বিবরণী, জনবলের তথ্যাদি, পোস্ট মার্কেটিং সার্ভেইল্যান্স, ফার্মাকোভিজিল্যান্স ইত্যাদি।
ঔষধের মত জীবনরক্ষাকারী পণ্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী এবং জনগণ যাতে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে, ঔষধ এবং ঔষধের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সম্পর্কে সম্যক ধারণা পেতে পারে, দেশে উৎপাদিত, আমদানিকৃত ও বাজারজাতকৃত ঔষধের উপর মানুষের ধারণা স্পষ্ট হয়, আস্থা প্রতিষ্ঠিত হয় সেজন্য ঔষধ নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে এবং ঔষধ সংক্রান্ত তথ্যাদি মানুষের নিকট সহজলভ্য নিমিত্ত ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সম্পাদিত কর্মকান্ডের প্রতিবেদন প্রতি বছর প্রকাশ করা হয়।
দায়িত্বসমূহ:
(ক) নিরাপদ, কার্যকর ও মানসম্পন্ন ঔষধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা।
(খ) কার্যকর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নিরাপদ, কার্যকর ও মান-সম্পন্ন ঔষধ সহজলভ্যতা নিশ্চিতকরতঃ মানব ও প্রাণী সম্পদ/স্বাস্থ্য সুরক্ষা করা।
ন্যাশনাল ড্রাগ কন্ট্রোল ল্যাবরেটরী (NDCL) কে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণঃ
ঔষধের পরীক্ষা ও বিশ্লেষণের সুবিধাদি সৃষ্টির লক্ষ্যে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অধীন National Drug Control Laboratory (NDCL)-এর Drug Testing Wing এবং Vaccine Testing Wing এর অবকাঠামো উন্নয়নসহ এবং অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হয়েছে। এই ধারাবাহিকতায় উক্ত ল্যাবরেটরী বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক অ্যাক্রিডিটেশন সনদ পেয়েছে।
Animal Laboratory:
ভ্যাকসিন টেস্টের জন্য Animal House এর আধুনিকায়নসহ National Drug Control Laboratory এর Animal Testing Laboratory তে ভ্যাকসিনের In-Vivo টেস্টিং ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
মেডিকেল ডিভাইস ল্যাবরেটরীঃ
National Drug Control Laboratory তে পিপিই, মাস্ক, গ্লাভসসহ অন্যান্য মেডিকেল ডিভাইস পরীক্ষার জন্য মেডিকেল ডিভাইস ল্যাবরেটরী স্থাপন করা হয়েছে। Medical Oxygen Test এর জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ট্রেডিশনাল মেডিসিন ল্যাবরেটরীঃ
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সপ্তম তলায় আধুনিক যন্ত্রপাতিসহ ট্রেডিশনাল মেডিসিন ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে।
কসমেটিকস্ ল্যাবরেটরীঃ
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অষ্টম তলায় আধুনিক যন্ত্রপাতিসহ কসমেটিকস্ ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে।
ভ্যাকসিন টেস্টের নিমিত্ত WHO Maturity Level-3 অর্জনে জন্য চলমান কার্যক্রমঃ
জুলাই, ২০২১ National Drug Control Laboratory Vaccine Testing এর ML-3 (Maturity Level-3) অর্জনের জন্য Formal Assessment সম্পন্ন হয়েছে। ভ্যাকসিন টেস্টের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ইতোমধ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। ভ্যাকসিন টেস্ট কার্যক্রম জোরদার করার জন্য ইআরপিপি কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন একটি কার্যক্রম চলমান আছে। বর্তমানে এনডিসিএল দেশে উৎপাদিত সমস্ত ভ্যাকসিনের টেষ্টের সক্ষমতা অর্জন করেছে।
National Drug Control Laboratory (NDCL) এর উল্লিখিত অর্জনের ফলে ঔষধের আন্তর্জাতিক মানের পরীক্ষা ও বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে আস্থা অর্জন করেছে। এতে করে ঔষধের গুনাগুন বিশ্লেষণের মাধ্যমে SF Medicines (Substandard and Falsified Medicines), Medical Device সনাক্তকরার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
আইনগত ভিত্তি:
* ১৯৪০ সালের ঔষধ আইন (রহিতকৃত)
* ১৯৪৫ সালের ঔষধ বিধি এবং তাদের সংশোধন
* ১৯৪৬ সালের ঔষধ বিধি এবং তাদের সংশোধন
* ১৯৮২ সালের ঔষধ (নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ এবং এর সংশোধন (রহিতকৃত)
* ২০০৬ সালের ঔষধ (নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ সংশোধন আইন (রহিতকৃত)
* জাতীয় ঔষধ নীতি, ২০১৬
* ঔষধ ও কসমেটিকস্ আইন-২০২৩:
স্বাধীনতার পর ১৯৭৬ সালে ঔষধ প্রশাসন প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে Drug Act- 1940 এবং ১৯৮২ সালে Drug Control Ordinance প্রনয়ণের মাধ্যমে ঔষধের উৎপাদন, মান নির্য়ন্ত্রণ, মূল্য নির্ধারণ, আমদানী রপ্তানীসহ বিবিধ বিষয় নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল। ঔষধ ও কসমেটিকস এর উৎপাদন, আমদানী, রপ্তানী, ক্রয়-বিক্রয়, মজুত, সংরক্ষণ, প্রদর্শন বিতরণ ও মান নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে Drug Act-1940 এবং Drug Control Ordinance-1982 রহিতক্রমে যুগোপযোগী ঔষধ ও কসমেটিকস্ আইন, ২০২৩ পাস হয়েছে।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উল্লেখযোগ্য কার্যাবলীঃ
সময়ের সাথে সাথে দেশের ঔষধ শিল্প বিস্তৃত হচ্ছে। বর্তমানে দেশে ২২৯ টি ফাংশনাল অ্যালোপ্যাথিক ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান প্রায় ৪৫,৯০৩ কোটি টাকার ঔষধ ও ঔষধের কাঁচামাল তৈরী করে। এছাড়া দেশের ২৮৬টি ইউনানী ও ২০৭ টি আয়ুর্বেদিক এবং ৭১ টি হোমিওপ্যাথিক ও ৩৯ টি হার্বাল ঔষধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান প্রায় ১০০০ কোটি টাকার ঔষধ উৎপাদন করে থাকে। দেশে ২,১৬,৭৯১ টি লাইসেন্সধারী ফার্মেসী রয়েছে। বিধি মোতাবেক এসব ঔষধ প্রস্তুতকারী ও বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিং এর দায়িত্ব ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর নিষ্ঠার সাথে পালন করে থাকে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম উল্লেখ করা হল-
(ক) ঔষধ উৎপাদনকারী, বিক্রয়কারী, আমদানিকারী ও রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স সংক্রান্ত এবং কসমেটিকস্ এর উৎপাদনকারী, আমদানিকারী ও রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স সংক্রান্ত;
(খ) ঔষধের নিবন্ধন ও মার্কেটিং অথরাইজেশন এবং কসমেটিকস্ এর নিবন্ধন সংক্রান্ত;
(গ) ঔষধের বাজার তদারকি এবং নিয়ন্ত্রণ;
(ঘ) কসমেটিকস্ উৎপাদন, বিতরণ, মান নিয়ন্ত্রণ পরিদর্শন তদারকি এবং আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ;
(ঙ) ফার্মাকোভিজিল্যান্স কার্যক্রম বাস্তবায়ন;
(চ) ঔষধ ও কসমেটিকস্ উৎপাদন বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন, তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ;
(ছ) ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল অনুমোদন এবং পর্যবেক্ষণ;
(জ) ঔষধ পরীক্ষাগারের কার্যক্রম, পর্যবেক্ষণসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ;
(ঝ) ভ্যাকসিনের লট-রিলিজ সংক্রান্ত কার্যক্রম;
(ঞ) ঔষধের মান নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ;
(ট) উপরি-উক্ত কার্যাবলী সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় যে কোনো আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ;
(ঠ) সরকার কর্তৃক সময় সময় অর্পিত অন্য যে কোনো দায়িত্ব পালন।